“পৃথিবীর বিভিন্ন গবেষণায় প্রমাণিত- স্থানীয় সরকার কাঠামো যথাযথ হলে প্রান্তিকসহ সকল মানুষের কল্যাণ সম্ভব। এজন্য প্রয়োজন স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা কার্যকরীকরণ এবং শক্তিশালীকরণ। আমাদের দেশে এই কাঠামোর ব্যবস্থাপনায় কিছু কিছু সমস্যা রয়েছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং স্থানীয় প্রশাসন উভয়ের সহাবস্থান এ ব্যবস্থাপনা এবং উন্নয়ন কাঠামোতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। জনপ্রতিনিধিদের সত্যিকার অর্থে জনসেবা করার মানসিকতা, শ্রদ্ধাবোধ, দায়িত্ববোধ এবং একইসাথে জনগণের অংশগ্রহণের মাধ্যমে তাদের কাজের স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে পারলেই যথাযথ কার্যকরী উন্নয়ন সম্ভব” বলে মনে করেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম। গভার্নেন্স এডভোকেসি ফোরাম-এর উদ্যোগে ১৯ ডিসেম্বর ২০২১, রবিবার, কৃষিবিদ ইনিস্টিটিউশন বাংলাদেশ, ঢাকায় অনুষ্ঠিত ‘কার্যকর স্থানীয় সরকার জাতীয় কনভেনশন ২০২১’-এ প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব বলেন মাননীয় মন্ত্রী। সম্মানীয় অতিথির বক্তব্যে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম বলেন, নারীর ক্ষমতায়ন, বিকেন্দ্রীকরণ ও স্থানীয় সরকার বিষয়ে বর্তমান সরকারের যথেষ্ট আগ্রহ রয়েছে। মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনও এ বিষয়ক সহায়তা অব্যাহত রাখবে। সভাপতির বক্তব্যে গভার্নেন্স এডভোকেসি ফোরামের চেয়ারপার্সন ও পিকেএসএফ-এর চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, স্থানীয় সরকারকে ক্ষমতায়িত করে তাদের হাতে দায়িত্ব তুলে দিতে হবে। কনভেনশনে ‘এসডিজির স্থানীয়করণ ও ৮ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার লক্ষ্য অর্জনে কার্যকর স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা: নীতি, সম্পদ আহরণ, জনঅংশগ্রহণ এবং জবাবদিহিতা প্রেক্ষিত’ শীর্ষক গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করেন ড. মোবাশের মোনেম। জাতীয় কনভেনশন-এর ১১ দফা সুপারিশমালা উপস্থাপন করেন গভার্নেন্স এডভোকেসি ফোরামের সমন্বয়কারী ও ওয়েভ ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক মহসিন আলী।
সুপারিশসমূহ:
১. ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা, উপজেলা ও জেলা পরিষদ এবং সিটি কর্পোরেশন এর আইনের যে যে ক্ষেত্রে অস্পষ্টতা এবং overlapping আছে তা সুনির্দিষ্ট করা;
২. উপজেলা পরিষদ আইন ২০০৯ এ প্রদত্ত মাননীয় সংসদ সদস্যের ভূমিকা এবং উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের ভূমিকা পর্যালোচনা করে বর্তমান উন্নয়ন প্রেক্ষাপট, সরকারের উন্নয়ন লক্ষ্য এবং বিকেন্দ্রীকরণের বিষয় বিবেচনায় নিয়ে সকলের ভারসম্যপূর্ণ সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব, কর্তব্য ও ক্ষমতা সুস্পষ্টভাবে আইনে লিপিবদ্ধ করা এবং তার বাস্তবায়ন কার্যকর করা;
৩. স্থানীয় সরকারের সকলস্তরে এক-তৃতীয়াংশ আসন সংরক্ষণ করে ঘূর্ণায়মান পদ্ধতিতে নারী প্রতিনিধিদের সরাসরি নির্বাচনের বিধান করা;
৪. স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহের কাজের দায়িত্ব অনুযায়ী আর্থিক বরাদ্দ বৃদ্ধি করা এবং ভূমি হস্তান্তর করের ৭% স্ব স্ব স্থানীয়সরকারের নিকট সরাসরি হস্তান্তর করা;
৫. সকল স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের করের ক্ষেত্র সম্প্রসারণ করা এবং কর আদায়ে স্থানীয় সরকারসমূহের ভূমিকা সুনির্দিষ্ট করা ও তার বাস্তবায়ন কার্যকর করা;
৬. সকল স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে জনঅংশগ্রহণের জন্য আইনের সুনির্দিষ্ট বিধান করা;
৭. সকল স্তরের স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহের দায়িত্ব¡ ও কর্তব্য যথাযথভাবে পালনের জন্য তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা;
৮. স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহের নিজস্ব পাটফর্ম যথাক্রমে বাংলাদেশ ইউনিয়ন পরিষদ ফোরাম-এর ৮ দফা সুপারিশ, বাংলাদেশ পৌরসভা সমিতি- ম্যাব এর ৩৩ দফা সুপারিশ এবং বাংলাদেশ উপজেলা পরিষদ এ্যাসোসিয়েশন-এর পক্ষে দায়েরকৃত মামলার প্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের বস্তবায়ন কার্যকর করা সহ সকল সুপারিশ পর্যালোচনা করে যুক্তিসঙ্গত সুপারিশসমূহ বাস্তবায়নে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করা;
৯. সরকারের উনয়ন লক্ষ্য অর্জনে জেলায় অবস্থানকারী অন্যান্য স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহের সাথে পারস্পরিক কাজের সম্পর্ক কেমন হতে পারে বিবেচনায় নিয়ে এবং এ পর্যন্ত জেলা পরিষদের নির্বাচিত চেয়ারম্যান ও সদস্যদের কাজের অভিজ্ঞতা পর্যালোচনা করে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে জেলা পরিষদ আইন পরিবর্তনের উদ্যোগ গ্রহণ করা;
১০. স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়-এর পক্ষ থেকে নিয়মিত সকল স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের কাজের মনিটরিং এবং সংশ্লিষ্ট নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ও সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্ব স্ব দায়িত্ব পালনে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার আইনি বিধান কার্যকর করা এবং
১১. উপরোক্ত বিষয়সমূহের সাথে সকল স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহের আইন ও বর্তমান বাস্তবায়ন পরিস্থিতি সংশ্লিষ্ট। তাই আলাদা আলাদাভাবে না দেখে দেশের উন্নয়ন লক্ষ্য এবং বর্তমান সময়ের চাহিদা পূরণের লক্ষ্য নিয়ে বিকেন্দ্রীকরণের ধারায় স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহকে ঢেলে সাজানোর জন্য মাননীয় সংসদ সদস্য, সকল স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান, সরকারি কর্মকর্তাবৃন্দ, সংশ্লিষ্ট নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি এবং স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞদের নিয়ে ১টি Task Force গঠন করে সুপারিশ প্রণয়ন এবং তা কার্যকর করতে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করা।